আশুলিয়ায় নারী পাচারকারী চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

ঢাকা জেলা জাকের পার্টির পক্ষ থেকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা

পরের সংবাদ

আজ সাভার মুক্ত দিবস

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত :৯:০১ অপরাহ্ণ, ১৪/১২/২০

মৃত্যুঞ্জয়ী কিশোর গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা শহীদ গোলাম মোহাম্মদ দস্তগীর টিটো’র কঠিন আত্মবলিদানের মধ্যদিয়ে চুড়ান্ত বিজয়ের মাত্র ২দিন আগে আজ ১৪ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয়েছিল সাভার উপজেলা। হানাদার বাহিনী যখন মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে নাস্তানাবুদ হয়ে পালানোর পথ খুজছে, এমনি এক সময় পশ্চাদপসারণরত পাক বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের এক প্রচন্ড সম্মুখ সমরে শহীদ হয় কিশোর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোহাম্মদ দস্তগীর টিটো।

গোলাম মোহাম্মদ দস্তগীর টিটো মানিকগঞ্জ জেলার উত্তর সেওতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম গোলাম মোস্তফা। প্রশিক্ষন শেষে টিটোকে প্রথমে পাঠানো হয় সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের বাহিনীতে। পরে সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় ঢাকায়। পরে টিটো যোগদেয় ঢাকার গেরিলা কমান্ডার নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর গ্রুপে। নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর গেরিলা গ্রুপের সাথে টিটো ডিসেম্বরের ৮ তারিখে সাভার থানার ইয়ারপুর গ্রামে এসে অবস্থান নেয়। সারাদেশে মার খাওয়া পাকবাহিনী তখন পশ্চদপসারণ করে রাজধানী ঢাকার উদ্দেশ্যে প্রাণ বাঁচাতে পিছু হাটছিল। ঠিক তখনি পাক বাহিনীর ৪০/৫০ জনের একটি ছোট দল টাঙ্গাইল থেকে বিতাড়িত হয়ে ১৪ ডিসেম্বর সকালে ঢাকার পথে কলমা গ্রামে পৌছলে তাদের পথরোধ করে দাঁড়ায় শহীদ টিটোর গেরিলা দল। হাতের কাছে চলে আসা শত্রু বাহিনীর ভীত-সন্ত্রস্ত শেষ দলটিকে পিষে মারার প্রতিজ্ঞা নিয়ে মুখোমুখি যুদ্ধে প্রাণ বাঁজি রেখে ঝঁপিয়ে পড়ে নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর নেতৃত্বাধীন ‘মানিক গ্রুপ’ নামে খ্যাত টিটোদের গেরিলা গ্রুপটি। টাঙ্গাইলে প্রচন্ড মার খাওয়া মূল বাহীনী থেকে বিচ্ছিন্ন, প্রাণভয়ে ভীত ওই পাক সেনাদের কয়েকজন সদস্য সাভারের মাটিতে শেষ যুদ্ধে প্রাণ হারায়।

সকাল পেরিয়ে তখন দুপুরের সূর্য মাথার উপর। থেমে থেকে গুলির আওয়াজে সাভার প্রকম্পিত হচ্ছে বারবার। সম্মুখে যুদ্ধের উত্তেজনা কিশোর টিটোকে সম্ভবতঃ গেরিলা যোদ্ধার আত্মরক্ষার সাধারণ সাবধানতাও ভুলিয়ে দিয়েছিল। ইতিমধ্যে ৭/৮ জন পাক সেনা যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে। বিজয় নিশ্চিত জেনে আবেগাপ্লুত কিশোর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর টিটো বিজয় উল্লাসে লাফিয়ে ওঠেন। এসময় পালিয়ে যেতে থাকা পাকবাহিনীর ছোড়া হঠাৎ এক ঝাঁক তপ্ত বুলেট এসে থামিয়ে দেয় কিশোর প্রাণের স্পর্ধা। শত্রুর এলএমজি’র আকস্মিক ব্রাশ ফায়ারে লুটিয়ে পড়ে অতিম-তেজ টিটোর সাহসী দেহ।

মূমুর্ষ টিটোকে সহযোদ্ধারা উদ্ধার করে দ্রুত পাশ্ববর্তি ডেইরী ফার্মে নিয়ে আসে। কিন্তু সেখানে ক্ষত-বিক্ষত টিটোর দেহ থেকে রক্তক্ষরণ বন্ধ করার কোন অবস্থাই ছিল না। সাভারের লাল মাটিকে আরো লাল করে অসীম সাহসী প্রাণ টিটোর প্রাণস্পন্দন সেখানেই ধীরে ধীরে থেমে যায়। সাভার হয় শত্রুমুক্ত। কিশোর বীরযোদ্ধা শাহীদ টিটোকে সাভার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীতে ডেইরী গেইটে সমাহিত করা হয়েছে।