সাভারে সময় টেলিভিশনের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন

আগের সংবাদ

সাভারে অঙ্গাত যুবকের মরদেহ উদ্ধার

পরের সংবাদ

স্বার্থ হাসিলের জন্য বেতনের আন্দোলন গড়িয়েছে ‘হিজাব বিতর্কে’

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

প্রকাশিত :৩:০৮ অপরাহ্ণ, ১৮/০৪/২২

নওগাঁ জেলার একটি স্কুলে হিজাব বিতর্কের পড় এবার সাভারের আশুলিয়ায় একটি চুল দিয়ে বিভিন্ন পন্য তৈরির কারখানার হিজাব বিতর্ক করার ঘটনা ঘটেছে। কারখানাটির বিউটি সেকশন নামের একটি শাখার শ্রমিকরা এই আন্দোলন করেছে গত (১৬ এপ্রিল)। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমে শ্রমিকদের এসব দাবিসহ হিজাব বিতর্কের কথা তুলে ধরা হয়েছে।

 

কারখানার কর্তৃপক্ষ বলছেন, কাজের পিস রেট বৃদ্ধির (বেতন বৃদ্ধি) আন্দোলন সফল করতে হিজাব বিতর্কে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এছাড়া একজন কর্মকর্তার চক্রান্তে হিজাবের বিষয়টি সামনে এনে আন্দোলন সফল করার চেষ্টা করেছে। কারখানার কাউকে হিজাব খুলতে বলেনি কেউ। যেনো দুর্ঘটনা না ঘটে সে জন্য হিজাবের মুখের অংশের পরিবর্তে মাস্ক এবং হাতের ঝুলে থাকা অংশ কেটে চাপিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

অন্যদিকে শ্রমিকরা বলছে, হিজাব ও বেতন দুই বিষয়ে আন্দোলন করা হয়েছে। সেই সাথে সুপারভাইজারের চাকরি পূর্ণবহালের জন্য দাবি করা হয়েছে। হিজাবের কথা বলতে গিয়েই সুপারভাইজারের চাকরি হারিয়েছে ও তাদের বেতনও কমেছে বলে মনে করছে শ্রমিকরা।

গত ১৬ এপ্রিল সকালের আন্দোলনে শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি প্রশাসন ও শ্রমিক নেতাদের সামনে মেনে নিয়ে শ্রমকিদের সাথে সমাধানের সিদ্ধান্তে এসেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। সেই সমাধানে কিছু বিষয় উল্লেখ্য করা হয়েছে। প্রথমত ঈদ পর্যন্ত আন্দোলনরত শ্রমিকরা সর্ম্পূণ ছুটিতে থাকবে। ঈদের ছুটি শেষে আন্দোলনরত শ্রমিকরা আবার কাজে ফিরবে। এপ্রিল মাসের বেতন ও ঈদের বোনাস আগামী ২৩ তারিখের ভেতর প্রদান করা হবে।

এই হিজাব কাণ্ডের পেছনের ঘটনা জানার জন্য রোববার (১৭ এপ্রিল) সকালে কারখানায় গিয়ে শ্রমিক ও কর্মকর্তাদের সাথে কথা হয়েছে। কারখানায় পরিবেশ সুন্দর দেখা গেছে শ্রমকিরা যে যার মত হিজাব পড়ে বা হিজাব ছাড়া কাজ করছে।

কারখানার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চায়নাদের ইয়াংজিন ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির একটি লাইনের অর্ধশতাধিক শ্রমিক কয়েক মাস ধরে কারখানায় উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্যের মুজুরি বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। গত ১১ এপ্রিল এই দাবিতে শ্রমিকরা কাজ না করে কারখানা থেকে বের হয়ে গিয়ে কর্ম বিরতি পালন করে। পরে গতকাল আবার আন্দোলনের সময় কিছু শ্রমিক হিজাব নিয়ে কথা বলে। শ্রমিকদের লাইনের সুপার ভাইজার ফেরদৌস হোসেন তালুকদার এই চক্রান্তটি করে শ্রমিকদের উষ্কিয়ে দেয়।

হিজাব আন্দোলনের কারণ নিয়ে শ্রমিকপক্ষ যা বলছে:

আন্দোলনে উপস্থিত থাকা শ্রমিক পারুল আক্তার বলেন, আমাদের বেতন উৎপাদনের উপর নির্ভর করে। আর এই উৎপাদিত পন্যের মুজুরি (পিস রেট) একদম কম। এছাড়া আমাদের মালিক যখন কারখানা পরিদর্শনে আসে তখন সবাইেকে হিজাব খুলে কাজ করতে বলে। তাই আমাদের আন্দোলন দুই বিষয়েই ছিলো। এক হিজাব ও দুই পিস রেট অর্থাৎ বেতন বাড়ানো। হিজাব খুলে কাজ করার কথা বললে আমরা ও আমাদের সুপারভাইজার তা না করে প্রতিবাদ করলে সুপারভাইজারকে কারখানা থেকে বের করে দেওয়ার কথা হয়। পরে আমরা সাবাই মিলে কর্ম বিরতি পালন করি। তখন কারখানা কর্তৃপক্ষ হিজাব পড়ার বিষয়টি মেনে নেয়। তবে সেই কারণে এই মাসে আমাদের বেতন কম দেয়। এখন আবার আন্দোলন করলে সব বিষয়ে মেনে নিয়ে আমাদের ঈদ পর্যন্ত ছুটি দিয়ে দেয়ে।

কারখানার সুপারভাইজার ফেরদৌস হোসেন তালুকদারপ বলেন, শ্রমকিরা প্রথম আন্দোলন শুরু করে হিজাব নিয়েই। সেই হিজাবের ঘটনায় কারখানা কর্তৃপক্ষ মেনে নিলেও সেই প্রভাব পরে বেতনের উপর। এরপর এটা নিয়ে আমি ও শ্রমকিরা কথা বলতে গেলে সাবাইকে কারখানা থেকে বের করে দিয়েছে। আসলে হিজাবের বিষয়টি কারখানা কর্তৃপক্ষ এড়িয়ে গিয়ে এখন সেই চাপ পিস রেটএর উপর আনতেছে। আমরা মেহনোতি শ্রমিক মানুষ তো আর কিছু বলতে পারবো না তাই। এছাড়া সেদিনের আন্দোলনে আমাদের সাথে একটি সমোঝতায় এসেছে কারখানা সেই অনুযায়ী আমাদের সবারই চাকরি আছে ঈদে পর জয়েন্ট করবো ও বেতনও পাবো।

মালিকপক্ষ যা বলছে:

কারখানার প্রশাসন বিভাগের কর্মকর্তা ইমরান হাসেম বলেন, এক মাস আগে কারখানা পরিদর্শনে আসেন আমাদের বিদেশি মালিক। এ সময় হিজাব পরা শ্রমিকদের হিজাবের সামনের অংশ মেশিনের সামনে ঝুলে ছিল। এছাড়া হাতের অংশ মেশিনের ভেতরে জাওয়ার উপক্রম হয়েছিলো। বিষয়টি দেখে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করেন মালিক। তখন শ্রমিকদের হিজাবের সামনের অংশের পরিবর্তে মাস্ক পরে ও হাতের অংশে চাপিয়ে কাজ করলে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা কম বলে জানান তিনি। কারখানার শ্রমিকরা হিজাব পরে কাজ করার কথা জানালে মালিক মেনে নেন। সেদিনই এই আলোচনা শেষ হয়ে যায়। হঠাৎ এক মাস পর গত শনিবার হিজাবের বিষয়টি সামনে এনে বিতর্কের সৃষ্টি করেন শ্রমিকরা।

তিনি বলেন, এই চক্রান্তের পেছনে রয়েছে তাদের লাইেনের সুপারভাইজার। তাকে কারখানার মালিক নিজে কারখানায় রাখতে চান না। পরে আমরা সুপারভাইজারকে কারখানা থেকে সব পাওনা নিয়ে চলে যেতে বললে তিনি শ্রমিকদের ভেতর প্রথমে পিছ রেট কাজের মূল্য বৃদ্ধি করতে আন্দোলনের সৃষ্টি করে। পরে আবার কাল সেই আন্দোলন সফল ও সুপারভাইজারকে কারখানায় চাকরিতে নেওয়ার জন্য হিজাবের নাটক তৈরি করে। এছাড়া গত মাসে শ্রমকিদের বেতন কম হওয়ার কারণ হলো গত মাসে তাদের উৎপাদনও কম ছিলো।

গতকাল শ্রমিকদের কারখানায় প্রবেশ করতে দেওয়া হলো না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা তো শ্রমকিদের কাজের জন্য কারখানায় আসতেই বলেছি। কিন্তু শ্রমকিরা সুপারভাইজার ছাড়া কারখানায় প্রবেশ করবে না। এর জন্য বাইরে আন্দোলন করে তারা।

কারখানাটির চাইনিজ ব্যবস্থাপক ইয়ং হং টাউ ফ্রেংক বলেন, আসলে কিছু শ্রমিক আমাদের কাজের মুজুরিতে শস্তুষ্ট ছিলো না। আমরা কাজের মুজুরি কিছুটা বাড়ানোর জন্য সময় নিয়েছিলাম। এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের এক কর্মকর্তার ইন্ধনের গত কয়েকদিন থেকেই কারখানায় কর্মবিরতি করে শ্রমিকরা। পরে গতকাল এই আন্দোলন হিজাবের বিষয়ে নিয়ে যায় শ্রমকিরা। পরে পুলিশ ও স্থানীয়রা মিলে আন্দোলন থামিয়ে শ্রমিকদের সকল দাবি আমাদের মানতে বললে আমরা মেনে নেই।

হিজাব নিয়ে কি সমস্যা হয়েছিলো কারখানায়? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আসলে আমাদের কারখানায় সোয়েটার কারখনার মত। যে যত পিস কাজ করবে সে তত টাকা বেতন পাবে। আর মেশিনগুলোতেও কাজ করতে গেলে কিছুটা উপর হয়ে কাজ করতে হয়। যেহতু হিজাবের মুখের অংশ মেশিনের উপর যায় এছাড়া হাতের বাড়তি অংশ মেশিনের ভেতরে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে সেহতু আমাদের মালিক এই বিষয়গুলো সমাধান করতে বলেছে। তাই বলে হিজাব খুলতে বলা হয়নি। আমাদের কারখানায় আরও শ্রমিক আছে যারা হিজাব পেরে মুখে মাস্ক দিয়ে হাতের কাপর ছোটো করে কাজ করছে। কিন্তু কিছু শ্রমিক বিষয়টি পুরো গুজবের মত ছড়িয়ে দিয়েছে।

ইয়ং হং টাউ ফ্রেংক তার কারখানার ক্ষতির কথা উল্লেখ্য করে বলেন, যে শ্রমিকরা আন্দোলন করছে তাদের হাতে আমাদের কারখানার একটি সিপমেন্টর জরুরি কাজ ছিলো। শ্রমিকরা আন্দোলন করায় আমরা সেই কাজ হাত ছাড়া করেছি। অনেক টাকার লোকশান হয়েছে আমাদের। এছাড়া কারখানার কর্ম পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। ইতি মধ্যে কিছু বাইয়ার কাজের ব্যাপারে জোরালো কথা বলছে।

বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যপারে তিনি বলেন, আমরা বাইরে দেশ থেকে ব্যবসা করতে এসেছি এই দেশে। এতে এই দেশের মানুষেরও লাভ আমাদেরও লাভ। কিন্তু কিছু কিছু বিষয় আমাদের এই দেশের উপর বিনিয়োগের ব্যাপারে অনিহা জন্মায়। আমি এই বিষয়টির সুষ্ঠু ভাবে তদন্ত করার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করবো।

শ্রমিক সংগঠন ও প্রশাসনের কাছে বিষয়টি যা মনে হয়ছে:

বিষয়টি নিয়ে স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের শ্রমিক নেতা আল কামরান বলেন, গত আন্দোলনের বিষয়ে সবাই বসে সমাধান করা হয়েছে। আন্দোলনের পেছনে একটি কারণ রয়েছে। শ্রমিকরা মনে করছে, দের মাস আগের তাদের হিজাব নিয়ে কথা বলেছে কারখানার মালিক। এরপর থেকেই তাদের বেতন তুলনামূল কম আসতেছে। তারা পিস বাই পিস রেটে কাজ করে বিধায় তাদের এক মাসের বেতন আরেক মাসে পায়। গত মাসের উৎপাদন কম হওয়ায় একদম কম বেতন পেয়েছে শ্রমিকরা। তারা ভেবেছে হিজাব খুলে কারখানায় আসিনি দেখে শাস্তি হিসেবে বেতন কমিয়ে দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এ কারণে তারা হিজাবের কথা সামনে এনেছে। এছাড়া শ্রমকিদের প্রাপ্য তারা পেয়ে গেছে। এখন আর কোনো সমস্যা নেই।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে শ্রমিক ও কারখানা কর্তৃপক্ষের সমাধানের সময় উপস্থিত ছিলেন শিল্প পুলিশ-১ এর সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসাই) মো: মিরন ইসলাম বলেন, প্রতি পিস কাজের রেট বাড়ানো জন্য আন্দোলন করেছে শ্রমিকরা। কিন্তু কিছু কিছু শ্রমিক হিজাবের বিষয়টি নিয়ে প্রপাকান্ড ছড়িয়েছে। আমি আজও সেই কারখানা পরিদর্শনের গিয়েছিলাম। আজও দেখেছি অনেক শ্রমকি হিজাব পড়েই কাজ করছে। আর যারা আন্দোলন করেছে তারাও হিজাব পরেই কাজ করছে। কারখানার মালিকের সাথে আমার কথা হয়েছে। মালিক বলছে আমরা কখনো হিজাব পরতে নিষেধ করিনি। সামনেও কখনো করবো না। আর শ্রমিকরা কাজের রেট বৃদ্ধি ব্যাপারে একটি প্রস্তাবনা দিয়েছে মালিক বিষয়টি নিয়ে সম্নয় করার চেষ্টা করবে বলে জানিয়েছেন। আসলে ধর্মী অনুভতিতে আঘাত হানিয়ে পিচ রেট এর আন্দোলনটি সফল করার চেষ্টা করা হয়েছে। এখন কারখানার পরিবেশ সুন্দর রয়েছে। সবাই কাজ করছে।