বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ওবায়দুল কাদের

আগের সংবাদ

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে প্রস্তুত জাতীয় স্মৃতিসৌধ

পরের সংবাদ

সাভার মুক্ত দিবসে শহিদ টিটোর সমাদিতে শ্রদ্ধা

নেছার উদ্দিন খান

প্রকাশিত :৮:০৯ অপরাহ্ণ, ১৪/১২/২১

 ডিসেম্বর সাভার হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে এক তরুণ যোদ্ধার প্রাণের মধ্য দিয়ে মুক্তি লাভ করেছিলো সাভারবাসী। তাই সাভারবাসীর জন্য আজ গৌরবের দিন ও শোকের দিন।

সেদিন হানাদার বাহিনীর বৃষ্টির মত ছোড়া গুলিতে মৃত্যু হওয়া মানিকগঞ্জের গোলাম মোহাম্মদ দস্তগীর টিটুকে সমাধি করা হয় সাভারেই। কারণ তিনি সাভারের মুক্তিযুদ্ধাদের সাথে থেকেই মুক্তিবাহিনী হিসবে কাজ করেছিলেন। মৃত্যুর পর ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ডেইরি গেটের পাশে গোলাম মোহাম্মদ দস্তগীর টিটুর দেহকে সমাধিস্থ করা হয়।

সেই সমাধি স্থলে শহীদ টিটোকে শ্রদ্ধা জানাতে প্রতিবারের মত এবারও আয়োজন করেছে আশুলিয়া প্রেস ক্লাব। এই আয়োজনে যুক্ত হয়ে ১৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে সাভার উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সায়েমুল হুদা।

ফুল দেওয়া শেষে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন ও শেষে শহীদ গোলাম দস্তগীর টিটোর আত্নার মাগফিরাতে দোয়া করা হয়।

এরআগে সকালে শিক্ষার্থী, গণমাধ্যম কর্মীরাও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের এই দিনে সাভার থানার ইয়ারপুর ইউনিয়নের ঘোষবাগ কাঠালবাগান এলাকায় নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের সম্মুখযুদ্ধ হয়। এদিন কিশোর মুক্তিযোদ্ধা টিটোর আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে হানাদারমুক্ত হয় সাভার। তাঁর মহান আত্মত্যাগের কথা আজও সাভারবাসী শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণে করে।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের বর্ণনা মতে, ভারতের অন্তিমনগর থেকে ২নং সেক্টরের অধীনে ৫২ জন গেরিলা শিমুলিয়া ইউনিয়নের গাজীবাড়ি এলাকার নেদু খাঁর বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং ক্যাম্প স্থাপন করেন। দেড় মাস প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় কয়েক শতাধিক নিরস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাকে। পরে মুক্তিযোদ্ধারা ইয়ারপুরের তৈয়বপুর ক্যাম্পে চলচ্চিত্রকার নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চুর নেতৃত্বে আরও একটি ক্যাম্প তৈরি করেন।

১৯৭১ সালে সাভারে বিভিন্ন সময় খণ্ড খণ্ড যুদ্ধ সংঘঠিত হয়েছে। ঢাকার প্রবেশমুখ হওয়ায় সবসময় পাক হানাদারদের চলাচল ছিল। তাই মাঝে মধ্যেই পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তেন মুক্তিযোদ্ধারা।

গোলাম দস্তগীর টিটোর সহযোদ্ধাদের কাছ জানা গেছে, টাঙ্গাইল থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর পাক হানাদার বাহিনী সাভারের আশুলিয়ায় ঘাঁটি নির্মাণ করে। ১৪ ডিসেম্বর আশুলিয়ার জিরাবো এলাকার ঘোষবাগ কাঠালবাগান এলাকায় নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর নেতৃত্বে পাক হানাদারদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে তারা। এসময় মুক্তিযোদ্ধা ও হানাদার বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধের এক পর্যায়ে সহযোদ্ধাদের নিষেধ উপেক্ষা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময় পাকবাহিনীর গুলিতে নিহত হন কিশোর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর টিটো। এরপরেও যুদ্ধ চালিয়ে যান মুক্তিযোদ্ধারা। যুদ্ধে হানাদার বাহিনী পরাজিত হয়ে পিছু হটে। পরবর্তীতে সাভারকে হানাদার মুক্ত ঘোষণা করা হয়।

এ বিষয়ে আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোজাফফর হোসাইন জয় বলেন, আমরা আজ বারো বছর যাবৎ এই দিনে শহীদ টিটোর জন্য আয়োজন করে আসচ্ছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক দফতরে যোগাযোগ করেছি। যেনো এই সমাধি স্থলটি স্বীকৃতি দেওয়া হয়। যেনো এখানে সবাই আসেন। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তবে এবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমাদের সাথে এখানে এসে শ্রদ্ধা জানিয়ে গেছেন।