সব
সাভারের আশুলিয়ায় মেডলার অ্যাপারেলস লিমিটেড নামক একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে অন্তত অর্ধশতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টা পর্যন্ত আশুলিয়ার পূর্ব নরসিংহপুর এলাকার মেডলার অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানায় অন্তত ৩১ জন শ্রমিক হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এর আগে, গতকাল দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ২০ জন শ্রমিক চিকিৎসা গ্রহণ করেন, তাদের মধ্যে দুইজনকে ভর্তি করা হয়।
শ্রমিকরা জানান, ৩১ জানুয়ারি কারখানার অষ্টম তলায় মাজেদা নামের এক নারী শ্রমিক মারা যান এবং তার মরদেহ দীর্ঘ সময় সেখানে পড়ে ছিল। এরপরও প্রতিদিনের মতো শ্রমিকরা নিয়মিত কাজে যোগদান করেন। কিন্তু বুধবার দুপুরের পর থেকে নারী শ্রমিকরা হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যেতে থাকেন, কেউ কেউ বমিও করতে থাকে। তবে, বিষয়টি কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব না দিয়ে কাজে ব্যস্ত ছিল। পরে একে একে আরও শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। শ্রমিকরা জানান, এ পর্যন্ত অনেক শ্রমিক অসুস্থ হয়েছেন।
অসুস্থ শ্রমিক রিনা বলেন, গত শুক্রবার আমাদের কারখানায় এক শ্রমিক হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে কারখানার মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়, তবে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে স্থানীয় নারী ও শিশু হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আরও একজন শ্রমিক আসফি বেগম বলেন, গত শুক্রবার এক নারী শ্রমিক মারা যাওয়ার পর আজ দুপুরে অনেক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। এমন পরিস্থিতি দেখে আমি কারখানা থেকে বের হয়ে বাইরে চলে আসি, তারপর আমিও অসুস্থ হয়ে পড়ি। এসময় আমার মাথা ঘুরে যায় এবং চোখ দিয়ে অন্ধকার দেখি। পরে আমাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। এখন আমি মোটামুটি সুস্থ আছি।
এ ব্যাপারে কারখানার অ্যাডমিন ম্যানেজার হাফিজ বলেন, গত শুক্রবার এক নারী শ্রমিক হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে হাসপাতালে পাঠানো হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং দুপুরের খাবারের আগে ৫ জন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এরপর দুপুরের পর অসুস্থতার সংখ্যা বাড়তে থাকে। মূলত আতঙ্কের কারণে শ্রমিকরা অসুস্থ হচ্ছেন। শ্রমিকদের দাবি ছিল, কারখানার প্রতিটি ফ্লোরে মিলাদের ব্যবস্থা করা হোক। তাদের অনুরোধে গতকাল একটি ফ্লোরে মিলাদ আয়োজন করা হয়েছিল। আজ সকালে সবাই কাজে যোগ দিলে, দুপুর থেকে আবারও অনেক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর পরেই কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
স্থানীয় নারী ও শিশু হাসপাতালের সহকারী ম্যানেজার হাবিব বলেন, গতকাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫১ জন শ্রমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে তাদের কারোরই শারীরিক কোনো সমস্যা নেই। তারা মূলত আতঙ্কের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এদের মধ্যে এখনও দুইজন শ্রমিক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।