সব
সাভারের আশুলিয়ার ইউনিক এলাকায় ফয়সাল কবির (৩২) নামে এক যুবককে প্রকাশ্যে কুপিয়ে
হত্যা করেছে দুর্বৃতরা। হত্যাকান্ডের কারণ উদ্ঘাটনে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, তবে হত্যার পরিকল্পনা আগে থেকে জানার পরও ফয়সালকে রক্ষা করতে পারেনি পুলিশ।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৬টার আশুলিয়ার ইউনিক এলাকার কাজী বাড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ফয়সাল কবির (৩২) ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা থানার ধর্মদি দক্ষিনপাড়া গ্রামের আবুল কালাম আজাদের ছেলে। তিনি বর্তমানে আশুলিয়ার মধ্য গাজীরচট এলাকায় হেলাল খন্দকারের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।
বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাথমিক ভাবে জানা যায়, জমি দখলের বিরোধের কারণে ফয়সালকে খুন করা হতে পারে। তবে তার পরিবার দাবি করেছে যে, তার কারো কোন শত্রুতা বা বিরোধ ছিল না। কিছু তথ্য প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে আসে, যার মধ্যে একটি সিসিটিভি ফুটেজও রয়েছে। ওই ফুটেজে দেখা যায়, বিকেল ৫টা ৪৭ মিনিটে গাজীরচট এলাকার কাজী বাড়ী গলির প্রবেশমুখে নিহত ফয়সাল দৌড়ে পালাচ্ছিলেন, আর তার পেছনে আরেকজন তাকে ধাওয়া করছিল। একই সময়ে, তিনটি মোটরসাইকেল গলিতে প্রবেশ করে এবং সেখানে ৭-৮ জন ব্যক্তি প্রবেশ করতে দেখা যায়।
এছাড়া, হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা সম্পর্কে আরও একটি ভিডিও হাতে আসে, যেখানে পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে, ফয়সাল কবিরের উপর হামলা হতে পারে এমন তথ্য আগে থেকেই পুলিশের কাছে ছিল। অস্ত্রের মহড়া চলছে এমন খবরও এসেছিলো তাদের কাছে। আশুলিয়া থানার এক উপ-পরিদর্শক বলছেন, “যারা হামলা করেছে, তারা আজকেই রাতে গ্রেপ্তার হবে। আমি রাতে ঘুমাবো না। আমি তাকে নিরাপদ রাখতে পারিনি। চারজন কনস্টেবল সিভিল পোশাকে নিয়ে আমি নিজে ইউনিফর্ম পরে গাড়ি নিয়ে ঘুরছি, যাতে এই ঘটনা না ঘটে। আমি জানি, তারা অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। এই মহড়া প্রতিদিনই হচ্ছে।” এছাড়া, তিনি আরও জানান যে, আজ বিকেলে ফয়সাল বাইপাইল বাসস্ট্যান্ডে জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে এসেছিলেন।
এ ব্যাপারে ইব্রাহিম নামে এক আড়তদার ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমার বাইপাইল এলাকায় ৬ শতাংশ জমি আছে। একদল সন্ত্রাসী সেই জায়গা দখল করার পাঁয়তারা করছে। দখল করতে না পেরে তারা আমার কাছে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। সেই জমি দেখাশোনার জন্য একজনকে দায়িত্ব দেই। দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির সঙ্গে ফয়সাল আমার কাছে এসেছিল। পরে ফয়সালও আমার জমিতে যাতায়াত করতো। শনিবার সন্ধ্যায় সন্ত্রাসীরা আমার বাড়িতে গিয়ে হামলা চালায়। সেখানে আমাকে না পেয়ে ফিরে আসার সময় তারা ফয়সালের দেখা পায়। পরে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। পরে আমি এ ব্যাপারে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি। বাসার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করেছি। যারা আমার বাড়িতে হামলা করেছে তারাই ফয়সালকেও হত্যা করেছে।
তিনি আরও বলেন, যে সন্ত্রাসী গ্রুপটা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তারা গত কয়েকদিন আগে যানজট নিরসনে নিয়োজিত ছাত্রদের মারধর করেছিল। পরে তাদের দলনেতাকে থানার লকআপে আটকে রাখা হলে ছাত্রদের সঙ্গে বিষয়টা মীমাংসা হয়। পরে তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
আশুলিয়ার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, নিহতের লাশ উদ্ধার করে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে এবং তারা তদন্ত করছে। শীঘ্রই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে। এ ঘটনায় আশুলিয়া থানায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
খুনের পরিকল্পনা সম্পর্কে আগেই জানতেন কি’না তাকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, না না এ বিষয়ে আমার জানা ছিল না। জানলে আমি অবশ্যই ব্যবস্থা নিতাম।