আশুলিয়ায় ছাত্রদলের নেতাকর্মী নিয়ে ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের অভিযোগ

আগের সংবাদ

নারীর শ্লীলতাহানি ও মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন

পরের সংবাদ

যুবলীগ নেতার অত্যাচারে অতিষ্ট এলাকাবাসী, এবার ফাঁসালেন ইউপি সদস্যকে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

প্রকাশিত :৭:০৪ অপরাহ্ণ, ০২/০৩/২২

সাভারের আশুলিয়ায় ডিস ব্যবসার তার কাটাকে কেন্দ্র করে যুবলীগ নেতা আমির হোসেন জয় ওরুফে মুরগী আমিরের নেতৃত্তে সাধারণ মানুষের উপর হামলা চালায় তার সর্মথক ও ভারাটিয়া সন্ত্রাসীরা। পরে এলাকাবাসি একত্রিত হয়ে জয়ের বাড়িতে হামলা করলে স্থানীয় ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীল আলম ঘটনা স্থলে গিয়ে এলাকাবাসিকে শান্ত করে ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।

পৃথক এই ঘটনায় দুই পক্ষেরই প্রায় ২৫ জনের মত ব্যাক্তি আহত হয়েছে। এদের ভেতর এলাকাবসির দুইজন আইসিউতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লরছেন। এঘটনায় আমির হোসেন জয়ের পক্ষ থেকে একটি মামলা হলেও এলাকাবাসির পক্ষ থেকে কেনো মামলা হয়নি। এলাকাবাসি থানায় মামলা করতে গেলে শুধু অভিযোগ নিয়েই তাদের ফেরত দেওয়া হয়। উল্টো ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম সমাধান করে শৃঙ্খলা ফেরাতে গেলে তাকে মামলার দ্বিতীয় আসামি করে আমির হোসেন জয়।

জানা গেছে, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আশুলিয়ার শিমুলিয়ার গোহাইল বাড়ীর রনস্থল এলাকায় হটাৎ করে নুরুল ইসলাম (নূরে খাঁ), আমির হোসেন জয়, সামান খাঁ, শামসুল খাঁ, আল-আমিন, মো: শামীম, তমছে ও আমজাদ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কোনো কারণ ছাড়ায় নুর হোসেন ও আলাউদ্দিনের উপর হামলা করে। এলাকাবাসী তাদেরকে আটকাতে গেলে এলাকাবাসীর উপরও হামলা চালায় এই সন্ত্রাস দল। এতে প্রায় ১৫ জনের মত আহত হয়। পরে এলাকাবাসি ক্ষুব্ধ হয়ে জয়ের বাড়িতে গিয়ে সেই সন্ত্রাসী দের উপর হামলা করলে এলাকাবাসীর সাথে সংর্ঘষ হয়। এতে জয়ের বাবা ও মাসহ পরিবারের কয়েকজন গুরুত্বর আহত হয়।

আরও জানা গেছে, সংর্ঘষের এই বিষয়টি মুঠোফোনে স্থানীয় ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলমকে জানানো হলে তিনি একটি বিচার থেকে তার সাথে থাকা সেই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতিকে সাথে নিয়ে মারামারি স্থানে পরিবেশ সান্ত ও বিষয়টি সমাধান করতে যায়। পরে জাহাঙ্গীর আলমের কথায় এলাকাবাসী চলে যায়। তবে জয়ের পরিবার বিষয়টি নিয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন যেখানে ইউপি সদস্যের নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

ঘটনার দুই দিন পর সোমরার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকালে সেই এলাকায় ঘটনাটির বিস্তারিত ও পেছনের তথ্য জানতে সরজমিনে ঘটনা স্থলে যায় প্রতিবেদক। এসময় কথা হয় ২৬ ফেব্রুয়ারি সেই ঘটনা, শিমুলিয়া ইউনিয়নের যুবলীগের সভাপতি আমির হোসেন জয় ও শিমুলিয়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলমরে পরিবার নিয়ে। জানতে চেষ্টা করা হয় কেনো এলাকাবাসির সাথে এই সংর্ঘষ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে জানা গেছে, তাদের সেই এলাকায় ডিসের ব্যবসা করে দুইজন ব্যাক্তি একজন কাজল ও আরেকজন জয়ের চাচা সামান খাঁ। মূলত গত দুই দিন আগে সামান খাঁর ডিসের লাইনের তার কে বা কাহারা কেটে নিয়ে যায়। সেই অভিযোগে হটাৎ জয়বাহিনী এলাকার সাধারণ মানুষের উপর হামলা করে। পরে এলকার লোকজন বিষয়টিতে ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের বাড়িতে হামলা করে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, যুবলীগের পদ পাওয়ার পর থেকেই জয়ের পরিবার আমাদের এলাকায় ত্রাস এর রাজ্য কায়েম করার চেষ্টা করে। এলাকায় কোনা বাড়ি করতে হলে তার পরিবারের লোকজনের দেওয়া দোকান থেকে কাচামাল কিনতে হয়। তা না কিনলে কাজ বন্ধ করে দেয়। এছাড়া অটোরিকশার চালকদের কাছ থেকে প্রতি দিন ও প্রতি মাসে চাদা নেয় তারা। গত নির্বাচনে জয় তাদের মনোনিত মেম্বারকে নির্বাচিত করতে চেয়েছিলো। কিন্তু তাদের এই ষড়যন্ত্র ভেদ করে জনগনের ভোটে জাহাঙ্গীর আলম ইউপি সদস্য হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জয়ের পরিবারের সাথে বিভিন্ন সময় ফেসাদের সৃষ্টি হয় জাহাঙ্গীর ও এলাকাবাসীর। শেষমেশ গত ২৬ ফেব্রুয়ারি জয় তাদের সন্ত্রাসবাহিনী নিয়ে এলাকাবাসির উপর হামলা চালায়। সেটার প্রতিবাদ এলাকাবাসি করতে গেলে সংর্ঘষ বেধে যায়।

২৬ ফেব্রুয়ারি ঘটনার দিন রনস্থল এলাকার দোকানে বসে ছিলেন আবু তালেব। তিনি মারামারির প্রথম অংশটুকু দেখেছেন। তার থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি দোকানেই বসে ছিলাম। হটাৎ করে জয় ও তার চাচারাসহ ১১ জন লোকজন ভ্যানে বসে থাকা এক জনের উপর দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারধর করে। তাকে আটকাতে আরও কয়েকজন এলে তাদের কেউ দেশী অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। এখানে কয়েকজনকে গুরুতর আহত করার পর জয়রা সবাই চলে যায়।

তিনি আরও বলেন, যখন এসে তারা মারে ধরার কোনো কায়দা নেই। সবাই আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পরেছি। তাদের হাতে দেশীয় নানা অস্ত্র ছিলো কেউ তখন তাদের ভয়ে থামাতে যায়নি। তাদের মারধরে দুইজন আইসিউতে আছে। জানিনা তাদের কি হবে।

এ বিষয়ে ভুক্তোভোগী ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কিছু দিন আগে কে বা কারা জয়ের চাচার ডিসের লাইনের তার কাটছে। আমি কিংবা আমার পরিবারের কেউ এই ডিস ব্যবসার সাথে জড়িত না। কিন্তু নির্বাচনকালীন পূর্ব শত্রুতার জেরে আমার বড় ভাই ও ভাতিজাকে এসে হঠাৎ মারধর করছে তারা। আরও কয়েকজনরে মারছে। পরে আমারে মামলার দুই নম্বর আসামি করছে। আমি অভিযোগ দিতে গেছি কিন্তু পুলিশ নেয় নাই। এখন গ্রেপ্তারের ভয়ে আমি পালিয়ে বেড়াচ্ছি। ঘটনার দিন আমি আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়নে একটি বিচারে ছিলাম। সেখানে আমার কাছে খবর আসে এলাকায় ঝামেলা হয়েছে। পরে আমি দ্রুত আমার সাথে থাকা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতিকে নিয়ে ঘটনা স্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। উল্টো তারা আমার নামেরই মামলা দিয়েছে। বিষয়টি দুঃক্ষ জনক।

ঘটনার দিন জাহাঙ্গীরের সাথে থাকা আওয়ামী লীগের নেতা আব্দুল্লাহ বলেন, ঘটনার সময় আমি ও জাহাঙ্গীর সাহেব বিচার ছিলাম। খবর পেয়ে দুইজনই সেখানে যাই। গিয়ে দুইজনে মিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রেণে আনি। পরে সুনি আগে জয়েরা হামলা করে পরে এলাকাবাসি তাদের বাড়িতে হামলা করে। এলাকায় ডিস ব্যবসা করে সামান। কিন্তু সামানে ডিস লাইনের তার কে কেটেছে সেটাতো কেউ জানে না। এমনি একজনে মারলে বা ফাসালে কি এটার সমাধান হবে। কিন্তু এখানে মেম্বার বিষয়টি সমাধান করতে গিয়েছিলেন তাইকে ফাসানো হয়েছে।

এসব অভিযোগ অস্বিকার করে আমির হোসেন জয় বলেন, ঝামেলা কোনা ডিস ব্যবসা নিয়ে নয়। ওই এলাকার মানুষের সাথে আমাদের আগে থেকেই সমস্য। এটা নিয়ে অনেক কিছু হয়েছে আগে। না আমি সেখানে যায়নি। ওদের এলাকা থেকে আমাদের এলাকা দুই কিলোমিটার দুরে। ওরা সবাই মিলে আমার বাড়িতে হামলা চালায়। আমার বাবাকে মারে আমার মাকে মারে। তারা এখন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আর মেম্বারও আমাদের বাড়িতে আসে।

শিমুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ.বি.এম আজাহারুল ইসলাম সুরুজ বলেন, এই পরিবারটি সেই এলাকাটা নষ্ট করে দিলো। আসলে ডিস ব্যবসা নিয়া ঝগড়া না খালি, বহুত কিছু। ওই গ্রুপটা (জয়ের গ্রুপ) পুরা সন্ত্রাসী। অরা আওয়ামী লীগও না, বিএনপিও না। অগোর কোন ধর্মকর্ম নাই। এরা সব লাঠি দল করে। সকাল ১০টায় জয়রা তাগো উল্টা পাল্টা মাইরা থুইয়া আইছে শুনছি। এ্যার আগে ডিসের তার কাটা নিয়া বিএনপির আব্দুল হাইয়ের নামে মামলা করছিলো জয়েরা। আমার এক নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার জাহাঙ্গীরতো কোন ব্যবসাও করে না। আমি ওসি তদন্ত জিয়া সাহেবরে ডিটেইলস জানাইছি। মনে হয় কোন হাইকমান্ড বলাইছে। যার জন্য এলাবাসির মামলা নেয় নাই।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) আব্দুর রাশিদ বলেন, ‘মারামারির ঘটনায় গতকাল ২৬ ফেব্রুয়ারি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলায় আসামি করা হয়েছে ১৪ জনকে। আমির হোসেন জয় মামলার বাদী।’

যুবলীগ নেতা জয় আগে হামলা চালিয়ে ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীরের ভাইসহ কয়েকজনকে আহত করেছে এঘটনায় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ কেন গ্রহণ করা হয়নি এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি তাদের অভিযোগ পাই নাই আরকি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এই বিভাগের সর্বশেষ