আশুলিয়ায় বাস চাপায় শ্রমিক নিহতের জেরে ভাঙ্গচুর ও অগ্নিসংযোগ

আগের সংবাদ

আশুলিয়ায় পথশিশুদের মাঝে নতুন জামা ও নগদ টাকা বিতরণ

পরের সংবাদ

পরিবার-পরিজন ছাড়াই ঈদ করবে হাজারো শিশু

হাসান ভূঁইয়া

প্রকাশিত :১২:৪৫ অপরাহ্ণ, ৩০/০৫/১৯

নিউজ ডেস্ক: বরিশাল বিভাগে বিভিন্ন বয়সী এক হাজারেরও বেশি এতিম ও সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোর পরিবার-পরিজন কিংবা আত্মীয়স্বজন ছাড়াই পবিত্র ঈদুল ফিতর পালন করতে যাচ্ছে।

তবে বাবা-মা বা আত্মীয়স্বজন সাথে নেই তাতে কি হয়েছে। স্বাভাবিক অন্য ১০টি পরিবারের মতোই তাদের ঈদ উদযাপন যাতে আনন্দময় ও উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়, সে লক্ষ্যে এরইমধ্যে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে সমাজসেবা অধিদফতর।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণাধীন সমাজসেবা অধিদফতরের আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পিতৃমাতৃহীন বা পিতৃহীন এতিম শিশুদের ভরণপোষণ, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও তাদের উপযুক্ত মর্যাদায় সমাজে পুনর্বাসনের জন্য সরকারিভাবে শিশু পরিবার পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে পাঁচ থেকে নয় বছরের মধ্যকার শিশুদের যেমন এখানকার পরিবারে আশ্রয় মেলে, তেমনি ১৮ বছর হলে এ পরিবার ত্যাগ কারাটাও তাদের জন্য বাধ্যতামূলক।

সমাজসেবা অধিদফতরের আওতায় বরিশাল বিভাগে এরকম মোট নয়টি শিশু পরিবার রয়েছে। যার মধ্যে পাঁচটি মেয়েদের জন্য ও চারটি ছেলেদের জন্য। সবমিলিয়ে এখানে এক হাজার ৫০টি আসন রয়েছে। সর্বোশেষ তথ্যানুযায়ী, মোট আসনের অনুকূলে ৮৮১ জন এতিম শিশু-কিশোর রয়েছে শিশু পরিবারগুলোতে। এছাড়া ১০ শতাংশ কোঠার ভিত্তিতে বরিশাল, ঝালকাঠি, বরগুনা ও পিরোজপুরের শিশু পরিবারগুলোতে ২৪ জন বৃদ্ধাও রয়েছেন। যারাও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন।

অন্যদিকে বরিশালের আগৈলঝাড়ায় একশ আসনের বিভাগীয় ছোটমনি নিবাসে রয়েছে পিতৃ ও মাতৃ পরিচয়হীন ২২ শিশু। ৭ বছর বয়স পর্যন্ত পরিত্যক্ত ও পাচার থেকে উদ্ধারকৃত এসব শিশুদের ছোটমনি নিবাসে মাতৃস্নেহে প্রতিপালন, রক্ষণাবেক্ষণ ও খেলাধুলার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষাও দেওয়া হচ্ছে।

এছাড়া ৫০ আসনের বরিশাল বিভাগীয় সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে প্রায় ১৫টি মেয়ে রয়েছে। পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিত ও ঝুঁকিতে থাকা বিপন্ন শিশুদের জন্য বরিশাল ও বরগুনা জেলায় অবস্থিত চারটি শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে ৩৫৮ জন শিশু-কিশোর রয়েছে।

এর বাইরে বিভাগের একমাত্র দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের ১১০টি আসনে ছয় থেকে ১২ বছর বয়সী ৬৩ জন শিশু রয়েছে। আর সব মিলিয়ে বিভাগে আঞ্চলিক সমাজসেবা অধিদফতরের আওতায় বিভিন্ন নিবাসে প্রায় এক হাজার ৪ শত শিশু-কিশোর থাকছে। সরকারিভাবে নিয়মিত তাদের ভরণ-পোষণের খরচ দেওয়া হচ্ছে।

সমাজসেবা অধিদফতরের আঞ্চলিক অফিসের উপ-পরিচালক শাহ পারভীন বলেন, এসব শিশুদের শুধু ভরণ-পোষণই নয়, প্রতিটি উৎসবেই তারা আনন্দ ভাগ করে নিতে পারে। বিশেষ করে ঈদের আনন্দ। আর যদি এখানে আনন্দ নাই পেতো, তবে যাদের স্বজন রয়েছে তারা তো সেখানেই যেতে চাইতো। কিন্তু ঈদসহ কোনো ধরনের বড় উৎসবে সমাজসেবার আওতাধীন পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে শিশুরা কোথাও যেতে চায় না।

তিনি বলেন, সব শিশুকে ঈদের আনন্দ পাইয়ে দিতে প্রতিবছর এ সময়ে এতিম ও সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশুদের নতুন পোশাক ও জুতা দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রতিটি শিশুর আলাদা আলাদা মাপও সংগ্রহ করা হয়। ফলে তাদের আনন্দটাও অন্যান্য পরিবারগুলোর মধ্যে থাকা শিশুর মতোই হয়।  

তিনি আরও বলেন, ঈদের দিনের জন্য বিশেষ খাবারের মেনু কর্তৃপক্ষই নির্ধারণ করে দেয়। বিগত দিনে এখানকার শিশুদের খাবারের তালিকায় সকালের নাস্তায় পায়েশ, পরোটা ও ডিম ছিলো এবং দুপুরে ও রাতের খাবারে গরুর মাংস, মুরগীর মাংস, পোলাউ, দধি ও কোল্ডড্রিংস ছিলো। এ বছরও মেনুতে উন্নত মানের খাবার থাকবে। তবে চূড়ান্ত মেনু এখনও পাওয়া যায়নি।

এসব কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে থাকা লোকদের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমাদের শিশু পরিবারসহ সবকটি কেন্দ্রেই যারা দায়িত্ব পালন করেন তারা অনেক আন্তরিক। তারা সব সময়ই শিশুদের সঙ্গেই থাকেন। আবার পরিবার-পরিজনের কাছে না থেকে শিশুরাও তাদের অভিভাবক হিসেবে এখানকার লোকদেরই আপন করে নিয়েছে। সরকার যেমন চায়না, তেমনি আমরাও চাই না একটি শিশুও উৎসবের আনন্দ কিংবা ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হোক।

আঞ্চলিক অফিসের সহকারী পরিচালক মো. ইকবাল কবির বাংলানিউজকে জানান, পুরো রমজান মাসজুড়ে শিশু পরিবারসহ বিভিন্ন কেন্দ্রে স্থানীয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন ব্যক্তির পক্ষ থেকে ইফতার আয়োজন ও ঈদের পোশাক দেওয়ার কার্যক্রমও চলতে দেখা গেছে। এতে কোনো ধরনের বাধা-বিপত্তিও নেই।

সূত্র: বাংলা নিউজ