সব
সাভারে ১৫ মিনিটের ব্যবধানে দুই বাসে ডাকাতি
সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে মাত্র ১৫ মিনিটের ব্যবধানে দুটি যাত্রীবাহী বাসে প্রকাশ্য দিবালোকে ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এসময় ডাকাতদল অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে যাত্রীদের সঙ্গে থাকা নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে গেছে।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে সাভারের ব্যাংটাউন ব্রিজ এলাকায় সাভার পরিবহন এবং সোয়া ১২টার দিকে সিএন্ডবি এলাকায় রাজধানী পরিবহনের বাসে এ ডাকাতের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা সাভার পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস দুপুর ১২টার দিকে সাভারের পুলিশ টাউন এলাকায় পৌঁছালে যাত্রীবেশী ছিনতাইকারীরা দেশীয় অস্ত্রের মুখে অন্যদের জিম্মি করে। এসময় ভয়ভীতি দেখিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে থাকা নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুটে নেয়। পরে বাসটি রাজধানীর গাবতলীতে পৌঁছালে যাত্রীরা বাসচালক ও সহকারীকে আটক করে দারুসসালাম থানায় সোপর্দ করেন।
এর ঠিক ১৫ মিনিট পর সাভারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএন্ডবির বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রাজধানী পরিবহনে অপর একটি যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। যাত্রীবেশে থাকা ডাকাতরা ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে যাত্রীদের কাছে থাকা মূল্যবান মালামাল লুটে নেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস জানিয়েছেন, শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে টিউশন করিয়ে রেডিও কলোনি থেকে ক্যাম্পাসে আসার পথে সিএন্ডবি এর আগে রাজধানী বাসে হঠাৎ করে তিনজন ছিনতাইকারী ওঠে। তিনজনের কাছেই চাকু ছিল। একজন ড্রাইভারকে চাকু দেখিয়ে বাস থামায়, বাকি দুইজন যাত্রীদের চাকু দেখিয়ে ভয় দেখাতে থাকে। তাদের মুখ সম্পূর্ণ খোলা ছিল। আমার পাশে বসা মহিলার গলা থেকে সোনার চেইন নিয়ে যায়। পিছনে বসা আরেকজন মহিলার গলার চেন কেড়ে নেয় এবং একজনের পকেট থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়ে তারা পালিয়ে যায়।
অপরদিকে সাভার ব্যাংক টাউন এলাকায় ছিনতাই হওয়া প্রত্যক্ষদর্শী বাসযাত্রী তায়েফুর রহমান জানান, তিনি পরিবার নিয়ে সাভার পরিবহনের একটি বাসে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বাসটি ব্যাংক টাউন বাসস্ট্যান্ডে থামার পর তিন-চারজন যুবক যাত্রীবেশে বাসে ওঠে। বাসটি ব্যাংক টাউন ব্রিজে পৌঁছালে তারা হঠাৎ অস্ত্র বের করে নারী যাত্রীদের জিম্মি করে ফেলে। এরপর যাত্রীদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, গলার চেইন, কানের দুলসহ স্বর্ণালংকার এবং নগদ টাকা লুট করে দ্রুত নেমে পালিয়ে যায়।
তিনি আরও জানান, ছিনতাইকারীরা আমার স্ত্রীর গলায় থাকা এক ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন ও লক্ষাধিক টাকা মূল্যের লকেট নিয়ে গেছে। এ সময় অন্যান্য নারী যাত্রীদের কাছ থেকেও একইভাবে মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেওয়া হয়। আমার মনে হচ্ছে বাসটির চালক এবং সহকারি ছিনতাইকারীদের সাথে জড়িত রয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনা হলে ছিনতাইকারীদের তথ্য পাওয়া যেতে পারে।
এ ঘটনার বিষয়ে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুয়েল মিঞা বলেন, ছিনতাইকারীদের ধরতে আমাদের নিয়মিত টহল টিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে। ঘটনার সময়ও গন্ডা এলাকায় পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। সাভার পরিবহনের বাসে ছিনতাইয়ের বিষয়টি আমরা জেনেছি এবং দোষীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, তাদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এসব ঘটনা রুখতে কয়েকটি অতিরিক্ত চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। সিভিল পোশাকে ডিবি পুলিশকে মোতায়েন করা হচ্ছে।
সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহীনুর কবির যুগান্তরকে জানান, আগের দুটি বাসের যাত্রীদের ছিনতাই ঘটনায় ৫জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। তবে আজকের দুটি ঘটনায় কোনো অভিযোগ না পাওয়ায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা রেকর্ড করা হয়নি। আমরা জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নিবো।
উল্লেখ্য, গত কয়েক মাসে ব্যাংক টাউন ও সিএন্ডবি এলাকায় একাধিক বাসে একই ধরনের ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় যাত্রীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। দিনদুপুরে এমন ঘটনা পুনরাবৃত্তি হওয়ায় সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।