নগ্ন ভিডিও ধারণ করে মুক্তিপণ দাবি, মূলহোতাসহ গ্রেপ্তার ৩

আগের সংবাদ

ম্যাসেঞ্জার অ্যাপ ছাড়াই ইনবক্স ব্যবহারের দুয়ার খুলছে ফেসবুক

পরের সংবাদ

কেমন আছেন সাভারের নারী শ্রমজীবীরা

হাসান ভূঁইয়া

প্রকাশিত :৭:২২ অপরাহ্ণ, ০৮/০৩/২৩

ভোরের (ফজরের) আযানের আগে ঘুম থেকে উঠতে হয়। রান্নাবান্না করা, গোসল করা, খাবার খাওয়া, ভৌ-দৌড়ে ফ্যাক্টরীতে সময় মত ঢুকা। আবার দুপুরে মাত্র ১ঘন্টা খাবারের সময় পাই। বাসায় যাওয়া-আসায় সময় চলে যায় অর্ধেক সময়। বাকী ৩০ মিনিটে নিজের খাওয়া, ছেলেকে খাওয়ানো, ছেলের কান্না থামানো আবার ভোঁদৌড়। ঠিক এমটাই বলেন পাবনার সুজানগর থেকে কাজের সন্ধানে আশুলিয়ায় আসা রাবেয়া আক্তার। তিনি চাকরি করেন আশুলিয়ার নরসিংপুর এলাকার হা-মীম গ্রুপে।

রাবেয়া আক্তার জানায়, তার বাড়ী পাবনা জেলার সুজানগর এলাকায়। পার্শবর্তী এলাকার এক ছেলে সাথে খুব ধুমধামেই বিয়ে হয়েছিলো তার। বিয়ের পরে ভালোই চলছিলো সংসার জীবন। হঠাৎই যেন পৃথিবীটা তার নিকট একটা যন্ত্রণা জায়গা হয়ে গেলো, যার কারন স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে। এর মধ্যে রাবেয়া এক পূত্র সন্তানের জননীও হয়ে যায়। শুধু ছেলেটির মুখের পানে চেয়ে চলে আসেন ইট-পাথরের শহর ঢাকার আশুলিয়ায়, এখানে এসে চাকরী নেয় হামীম গ্রুপ নামে একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে। গার্মেন্টস সম্পর্কে রাবেয়ার কোন ধারনায় ছিলো না। এত কস্ট মানুষ কেমনে করে।

খুব কম দিনই ৫ টার দিকে ছুটি হয় বেশির ভাগ দিনগুলোতে রাত ৮টা, ১০টা ও ১২টায়। এমনকি সিপমেন্ট থাকলে সারারাতই কাজ করতে হয়। এত কস্টের পরও মাস শেষে বেতন ১০ থেকে ১২ হাজার, যা বাসা ভাড়া, দোকানের বিল, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রবের খরচ, ঔষধ খরচ, ছোট্ট ছেলেটার খরচ চালাতে হিমসিম খেতে হয়। কথা গুলো বলতে গিয়ে রাবেয়ার চোখ ভিজে যায় অশ্রুতে।  অনেক অভিমান নিয়ে বলে উঠে কোন জিনিসের দাম বাড়েনাই, যা কিছু কিনতে যায় তার দামই তিন চার গুন বেড়ে গেছে, তাহলে আমাদের বেতন কেন বাড়ে না। আমাদের কি বাচার অধিকার নাই।

কথা হয় আকলিমা নামের এক নারী সিকিউরিটি গার্ডের সাথে তিনি জানান, ২০১৭ সালে ঢাকার আশুলিয়ায় আসেন তিনি। সে সালের এইচএসসি পরিক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে আশুলিয়ার হামীম গ্রুপে সিকিউরিটি গার্ডের  চাকরি নেন। তার পরিবারের একমাত্র মেয়ে তিনি। বাবা হারা আকলিমা চাকরি নিয়ে পরিবারের হাল ধরেন।মেয়ে গার্ড বলে প্রতিনিয়ত শুনতে হয় না ধরনের কথা, আর যা বেতন পান তা দিয়ে কোন মতে চলে যায়।

বাগেরহাটের চিতলমারীর বাসিন্দা সুজাতা রানী মন্ডল (৫০) জানান, তাদের অভাব অনটনের সংসার, সংসার চালাতে কঠোর পরিশ্রম করতে হতো স্বামী মন্টু মন্ডলের। তবুও হিমসিম খেতে হতো সংসার চালাতে। ২০০৯ সালে স্বামী স্ত্রীর পরামর্শ করে চলে আসেন সাভারের আশুলিয়াতে, ছোট একটা চায়ের দোকান করা শুরু করেন এবং ভালোই চলতেছি তারা। হঠাত করে মন্টু মন্ডল মৃত্যুতে তাদের সুখের সময় আর থাকলো না। প্রায় ১৪ বছর যাবত স্বামীর সাথেই চায়ের দোকানে সহযোগী হিসেবে কাজ করতে সুজাতা রানী মন্ডল। স্বামী মারা যাওয়ার পর নিজেকেই চালাতে হচ্ছে স্বামী দোকান। কোন মতে চলে যাচ্ছে তার সংসার। একছেলে ও একমেয়ে সংসারে ছিল তাদের। বর্তমানে তাদের বিয়ে হয়েছে। ছেলে গ্রামের বাড়ীতে থাকে। কিন্তু সুজাতার ভরসা তার স্বামীর দোকান।

আশুলিয়ার একটি প্রাইভেট স্কুলের শিক্ষকা ফারজানা আক্তার ববি জাননন, লেখাপড়া করে ইচ্ছে শিক্ষকতার পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করার। প্রবল ইচ্ছে পুরণের জন্য লেখাপড়ার পাশাপাশি পাইভেট একটা স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি। শুরু থেকে যা বেতন পেতেন তা দিয়ে লেখাপড়ার খচর কিছুটা পুরুণ হলেও আস্তে আস্তে তা পেশা হিসেবে পরিনতি হয়। কিন্তু জীবন পরিচালনা ক্ষেত্রে কঠিন বাঁধার মুখে দাঁড়াতে হয়। যার কারন হলো বেতন যা পায় তা দিয়ে আশুলিয়াতে একটা রুমে ভাড়া থাকে খাওয়া-দাওয়ার খরচ চালানো। বর্তমান নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রবের যে দাম তাতে করে চলা খুব কঠিন। যার ফলে দুই একটা টিউশনি করে কোন মতে চলে যাচ্ছে।

আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চলে কর্মরর্ত বিভিন্ন শ্রমজীবী নারীদের সাথে কথা বলে জানা যায় একই ধরনের কথা। মোট কথা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের যে দাম, তাতে ভালো নেই শ্রম জীবীরা। তাই সবাই নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার দাবি জানান।

প্রসঙ্গত যে, আজ ৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আমেরিকার সোশ্যালিস্ট পার্টি নিউইয়র্কে জাতীয় নারী দিবসের আয়োজন করে। এর প্রস্তাব দিয়েছিলেন শ্রমকর্মী থেরেসা মালকিয়েল। শহরের গার্মেন্টস শ্রমিকদের এক প্রতিবাদস্বরূপ শুরু হয়েছিল এই দিনটির যাত্রা।

১৯১০ সালে জার্মান প্রতিনিধিরা নারী দিবস পালন করেন। এরপরে ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ নারী দিবস উদ্‌যাপন শুরু করে। পরে ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ৮ মার্চ দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। তখন থেকেই দিনটি উদ্‌যাপন করা হচ্ছে।