দিনের শুরুতেই নৈশকোচের ধাক্কায় ৫ দিনমজুর নিহত

আগের সংবাদ

ধামরাইয়ে ৫৬০ কেজি ত্রাণের চালসহ ইউপি চেয়ারম্যান আটক

পরের সংবাদ

ওসি প্রদীপের মিথ্যা মামলায় ১১ মাস ধরে কারাগারে সাংবাদিক

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত :১০:০৮ পূর্বাহ্ণ, ০৮/০৮/২০

মাদকের মিথ্যা মামলায় ১১ মাস ধরে কারাগারে থাকলেও ‘কক্সবাজার বাণী’ পত্রিকার সম্পাদক ফরিদুল মোস্তফা খান। আপনজন কারান্তরীণ হলে স্বজনদের ঘুম হারাম কিন্তু তাকে জামিনে ছাড়াতে পরিবারের নেই কোনো উদ্যোগ।

তবে এর কারণ পারিবারিক অর্ন্তকলহ নয়। ওসি প্রদীপের ক্রসফায়ারের ভয়ে কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছেন ফরিদুলের পরিবার।

কেন কারান্তরীণ এই সাংবাদিক— এ বিষয়ে বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়েই বেরিয়ে আসছে এমন তথ্য। টেকনাফের ওসির প্রদীপের রোষানলে পড়ে সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফার জীবন কাটছে এখন কারাগারে।

এর আগে মিথ্যা মামলায় রিমান্ডের নামে এই সাংবাদিকের ওপর ওসি প্রদীপ চালিয়েছে অমানবিক নির্যাতন। চোখে মরিচের গুঁড়া দিয়ে নির্যাতন করায় বর্তমানে দুটি চোখই নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া তার হাত-পাও ভেঙে দিয়েছে পুলিশ।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার দুই চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। ওসি প্রদীপ কুমারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লিখেতে গিয়েই আজ জীবন হারাতে বসেছেন সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান।

জানা গেছে, ওসি প্রদীপের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জেরেই কক্সবাজার বাণী পত্রিকার সম্পাদক ফরিদুল মোস্তফাকে মাদক মামলায় ফাঁসায় প্রদীপ কুমার দাস। ক্রসফায়ারের ভয়ে রাতের আঁধারে কক্সবাজার থেকে পালিয়ে আসা ফরিদুল মোস্তফার জীবন আজ নিস্তেজ। অসহায় স্ত্রী, সন্ত্রান, পিতা-মাতাও।

আর এ অসহায়ত্বের একমাত্র কারণ ওসি প্রদীপের দুর্নীতি ও অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ। অন্ধ প্রায় চোখ, হাত ভাঙা, আঙ্গুল থেঁতলানো মোস্তফা হয়তো আর কোনোদিন সাংবাদিকতাই করতে পারবে না।

সাবেক মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই ওসি প্রদীপের একের পর এক ঘটনা জনসম্মুখে আসছে। তার মধ্যে সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফার ঘটনাও একটি। তার পরিবারকে নানাভাবে হয়রানি করতো টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ।

কোনো পরোয়ানা ছাড়াই ঢাকার পল্লবী থেকে তাকে ধরে নিয়ে টেকনাফ থানায় তিনদিন আটকে রেখে করা হয় অমানুসিক নির্যাতন। পরে মিথ্যা মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে পাঠানো হয় কারাগারে।

২০১৯ সালে ফরিদুল মোস্তফার স্ত্রী হাসিনা আক্তার বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেন। কিন্তু মুক্তি মেলেনি ফরিদুল মোস্তফা খানের।

তার স্ত্রী হাসিনা আক্তার বলেন, তার স্বামী বিভিন্ন সময় টেকনাফ থানার ওসিসহ পুলিশ সদস্যদের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করেছেন। এ কারণে তাকে ২০১৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মিরপুর এলাকার বাসা থেকে ধরে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।

সে সময় তার চোখে মরিচের গুঁড়া দিয়ে নির্যাতন করায় বর্তমানে দুটি চোখই নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ ছাড়া তার হাত-পা ভেঙে দিয়েছে পুলিশ। চিকিৎসক জানিয়েছেন তার এক চোখ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

ফরিদুল মোস্তফার মেয়ে সুমাইয়া মোস্তফা খান বলেন, তাদের পরিবারের কেউ কোনো মামলার আসামি নয়। কখনো তারা কোনো অনিয়মে জড়াননি। এরপরও পুলিশ ঠাণ্ডা মাথায় তার বাবাকে মামলা দিয়ে সমাজে তাদের পরিবারটিকে হেয় করেছে।

স্থানীয় সাংবাদিকরা বলছেন, ওসি প্রদীপের নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফাকে মাদক মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। এত দিন ওসির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাননি। সাবেক মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর ওসির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছি।

সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ও বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের (বিএমএসএফ) সাধারণ সম্পাদক আহমেদ আবু জাফর বলেন, সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খানকে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে তা আইয়্যামে জাহেলিয়াতের নির্যাতনকেও হার মানিয়েছে। কোনো সভ্য মানুষ কিংবা পুলিশের দ্বারা চোখে মরিচের গুঁড়া ছিটানো, বেয়নেট দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় খুঁচিয়ে এমনকি গোপনাঙ্গেও আঘাত করা হয়েছিল। সূত্র: আমার সংবাদ