সাভারে বাড়তি মূল্যে মাস্ক বিক্রির অভিযোগে আটক ২

আগের সংবাদ

নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে আশুলিয়া থানা পুলিশের উঠান বৈঠক

পরের সংবাদ

আশুলিয়ায় বেপরোয়া জামায়াত নেতা হাবিব ও তার ক্যাডার বাহিনী

হাসান ভূঁইয়া

প্রকাশিত :৪:৪৬ অপরাহ্ণ, ১০/০৩/২০

হাসান ভূঁইয়া, নিজস্ব প্রতিবেদক:

ঢাকার উপকণ্ঠ শিল্পাঞ্চল আশুলিয়া একটি অন্যতম জনবহুল এলাকা। কাজের সন্ধানে মানুষ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে পাড়ি জমান এই শিল্পাঞ্চলে। অনেকে আবার সারা জীবনের কঠিন পরিশ্রমের উপার্জন দিয়ে এখানেই বাসস্থান করার চেষ্টা করেন, করেছেনও অনেকে। কারণ এখানে স্থায়ী বসতির পরিবারের থেকে জমি কিংবা বাড়ি কিনে বসবাস করা পরিবারের সংখ্যাই বেশি। এই সারা জীবনের পরিশ্রমের উপার্জনে কেনা বাড়ি বা জমি যদি জোর করে ছিনিয়ে নেয় কিছু হায়নার দল, তখন তাদের রাস্তায় বসা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। ঠিক এমনি অবস্থা আশুলিয়ার কুরগাঁও এলাকার বিধবা বৃদ্ধা নারী তারা বেগম ও কুরগাও এলাকার মৃত আবুল বাশারের ছেলে সুমনের।

বর্তমান সুমনের অবস্থা খুবই মর্মান্তিক, তার দুইটি কিডনি নষ্ট, একমাত্র সম্বল মৃত বাবার রেখে যাওয়া জমি, আর সেই জমি টুকু এলাকার ভূমিদস্যু জামায়াত নেতা হাবিব ও তার ক্যাডার বাহিনীর দখলে। এখন অর্থের অভাবে বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকেই মরতে হবে তাকে। এযেন আধুনিক যুগে জাহেলিয়াত যুগের অত্যাচার।

শুধু এখানেই নয়, পাথালিয়া ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে এভাবেই চলছে জামায়াত নেতা হাবিব ও তার ক্যাডার বাহিনীর অত্যাচার। দিনের পর দিন তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাদের একের পর এক অত্যচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে একটি অসহায় পরিবার। তার এই নির্যাতনে পথে বসতে শুরু করেছে বেশ কয়েকটি পরিবার।

জানা যায়, ২০১৭ইং সালে ১১ অক্টোবর আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় নাশকতার চেষ্টার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার মাধ্যমে আলোচনায় আসেন কুরাগাঁও এলাকার এই জামায়াত নেতা হাবিবুর রহমান। মামলা নং-৭৩৮৮(৪)/১।

কিছুদিন পরেই ২০১৭ইং সালের ১৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় আশুলিয়ার কুরগাঁও এলাকার হাজী আলী আহাম্মদ এর সাথে বিরোধের জের ধরে ফোনে ভয়ভীতিসহ হুমকি দেওয়ার অভিযোগে হাবিবসহ আর দুই জনের বিরুদ্ধে ২৩ অক্টোবর আশুলিয়া থানায় একটি জিডি দায়ের করেন, জিডি নং-১৬৭০।

এর আগে ২০১৭ইং সালের ২১ ফেব্রুয়ারী আশুলিয়ার টাট্টীবাড়ী এলাকার ঢাকা কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির ভিতরে জমি দখলের চেষ্টায় বাঁশের বেড়া ভাংচুর ও জমির কেয়ারটেকারকে প্রাণ নাশের হুমকির অভিযোগে হাবিবসহ আরও একজনের বিরুদ্ধে একইদিনে আশুলিয়া থানায় একটি জিডি দায়ের করা হয়, জিডি নং-১৩৬৪।

এর কিছুদিন আগেই জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ২০১৬ইং সালের ২৫ জুন রাত সাড়ে ১০টার দিকে আশুলিয়ার কুরগাও এলাকার জসিম উদ্দিনের বাড়িতে প্রবেশ করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে, পরে জসিম উদ্দিন ও তার পিতা এগিয়ে আসলে তাদেরকে এলোপাথারী কিল-ঘুষি, লাথি মারিয়া ফেলে দিয়ে ঘড়ের ভিতরে প্রবেশ করে। পরে তারা ঘরের খাট ও আলমারীসহ বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র ভাংচুর করে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার ক্ষয়-ক্ষতি করে এবং জসিমের পরিবারের সবাইকে মারিয়া ফেলিবে বলে প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান করে। এ ঘটনায় ২৬ জুন আশুলিয়া থানায় একটি জিডি দায়ের করা হয়, জিডি নং-১৭৮৯।

এর পরে ২০১৮ইং সালের ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যার দিকে নির্বাচনী প্রচারণার সময় আওয়ামীলীগ সমর্থকরা নৌকার মিছিল নিয়ে ধামসোনা ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের অফিসে যাওয়ার সময় আশুলিয়ার পুরাতন ইপিজেড এলাকায় পৌছালে বিপরীত দিক থেকে বিএনপি-জামায়াত সমর্থকরাও ধানের র্শীষের মিছিল নিয়ে আসতে থাকে। ধানের র্শীষের মিছিল নিয়ে বিএনপি-জামায়াত সমর্থকরা যাওয়ার সময় আওয়ামীলীগ সমর্থকদের নৌকা মিছিল লক্ষ্য করে ‘এক একটা নৌকার কর্মী ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর’ স্লোগান দিতে থাকে। পরে তারা নৌকার মিছিল গতিরোধ করে অতর্কিত হামলা চালায়। এছাড়াও তারা ফেস্টুনে ব্যবহৃত লাঠি দিয়ে হত্যার উদ্যেশ্যে এলোপাথারী পিঠাতে থাকে। এ সময় একটি মটরসাইকেলেও আগুন লাগিয়ে দেয় এই বিএনপি-জামায়াত সমর্থকরা। পরে স্থানীয়রা ও আওয়ামীলীগ অফিসে বসে থাকা লোকজন এগিয়ে আসলে বিএনপি-জামায়াত সমর্থকরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ২৪ ডিসেম্বর হাবিব ও তার ক্যাডার বাহিনীসহ ৯১ জনের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং-৬৩১০৬২। বর্তমানে তিনি এই মামলার পলাতক আসামী বলেও জানা যায়।

সর্বশেষ হাবিব ও তার ক্যাডার বাহিনী গত ০৯ জানুয়ারী আশুলিয়ার সেনওয়ালিয়া মৌজায় নুর হোসেন এর মালিকানাধীন ৮ শতাংশ জমিতে মাটি ফেলে জমি দখলের চেষ্টা করে। পরে বাধা দিলে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। না দিলে ছলে বলে কৌশলে জমি যে কোন সময় দখলসহ জান মালের বড় ধরনের ক্ষয়-ক্ষতি করবে বলে হুমকি দেয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নুর হোসেন বাদি হয়ে গত ১১ জানুয়ারী (জিডি নং-৯৩৬) আশুলিয়া থানা একটি জিডি ও গত ২৬ জানুয়ারী কোর্টে একটি মামলা (মামলা নং- সিআর-৮২/২০২০) দায়ের করেন। বর্তমানে সেই জমিতে কোর্টের রায় অমান্য করে হাবিব তার ক্যাডার বাহিনীর সাহায্যে দখল নিয়ে বাড়ি নির্মাণ করছে বলে জানায় জমির মালিক নুর হোসেন।

জামায়াত নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব বরিশাল জেলার মোলাদিয়া থানার চরপদ্মা গ্রামের মৃত করিম মৃধার ছেলে। সে ১৯৯৩ সালে স্ব-পরিবারে আশুলিয়ার কুরগাঁও এলাকায় আসেন। দিনপাতি পার করতে হাবিব চা দোকানে কাজ করতেন, পরে কুরগাঁও বাজারে একটি ক্রামবোর্ড খেলার দোকান দেন। ক্রামবোর্ড খেলার আড়ালে তিনি জুয়ার আসর শুরু করেন। সেখান থেকেই হাবিব অবৈধ টাকা উপার্জন শুরু করেন। অবৈধ উপার্জনের টাকা দিয়ে ক্যাডার বাহিনী পালতে শুরু করেন হাবিব। জোড়ার আসর চালানোর অভিযোগে ডিবি পুলিশ তার দোকান ভেঙ্গে দিলে কিছুদিন গা ঢাকা দেয় হাবিব। গাঁ ঢাকা দিলেও চাঁদাবাজি ও জমি দখল থামেনি। আস্তে আস্তে হাবিব কোটিপতি হয়ে যায়। বর্তমানে হাবিব ৩ টি বাড়ি ও একটি প্লটের মালিক। এছাড়াও বেশ কয়েকটি জমিও তার দখলে রয়েছে।