সব
এক্সপ্রেস প্রতিবেদক:
অবশেষে সাভারের লিবার্টি ফ্যাশন ওয়্যারস লিমিটেড নামের কারখানার বৈদ্যুতিক, অগ্নি ও ভবনের কাঠামো পরিদর্শন করেছে ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড এর ৯ সদস্যের প্রতিনিধিদল। এর মাধ্যমে তিন বছরের অধিক সময় বন্ধ থাকা প্রতিষ্ঠানটি আশার আলো দেখছে। বিদেশী খুচরা প্রতিষ্ঠানের ভুল প্রতিবেদনের ফলে কারখানার ৫ হাজার শ্রমিক বেকার রয়েছে ও প্রায় হাজার কোটি টাকার পোশাক রপ্তানী থেকে বঞ্চিত রয়েছে লিবার্টি পোশাক কারখানাটি।
বুধবার বিকালে সাভারের আশুলিয়ার জিরানীতে লিবার্টি ফ্যাশন ওয়্যারস লিমিটেড পোশাক কারখানাটি পরিদর্শন করেন। এসময় অ্যাকর্ডের নির্বাহী পরিচালক নেদারল্যান্ডের নাগরিক রফ উইজ সহ আরও ৮ জন। কারখানা কর্তৃপক্ষকে ১৯ মার্চ ই-মেইলের মাধ্যমে অ্যাকর্ড জানিয়েছে, আজ বুধবার কারখানাটি পরিদর্শন করবেন তারা।
অ্যাকর্ডের প্রতিনিধি দল তিনটি ভাগে- স্ট্যাকচারাল, ইলেকট্রিক ও ফায়ার প্রকৌশলীরা পর্যবেক্ষন করেন। এসময় প্রতিনিধি দলের প্রধান রফস উইজ সাংবাদিকদের সঙ্গে কোন কথা বলেননি। তারা পর্যবেক্ষনে এসেছেন, এ বিষয়ে যে প্রতিবেদন পাওয়া যাবে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেবেন। পরে এ বিষয়ে জানানো হবে।
এ বিষয়ে কারখানার চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজ্জামেল হক জানান, কারখানাটি ঠিক মতো চলছিল। নিয়ম অনুযাযী শ্রমিকদের সব ধরনের সুবিধা প্রদান করে আসছিল। কিন্তু ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পরের মাসে যুক্তরাজ্যভিত্তিক খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান টেসকোর প্রকৌশলী সংস্থা মিডওয়ে কনসালট্যান্সি সার্ভিসকে (এমসিএস) দিয়ে লিবার্টির কারখানা ভবন নিরীক্ষা করায়। কারখানা পরিদর্শন করে এমসিএস প্রতিবেদন দিয়ে বলেছিল, ‘কারখানার ২ নম্বর ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ। ৬০ ঘণ্টার মধ্যেই ধসে পড়বে।’ এর পরপরই টেকসোর কর্তৃপক্ষ লিবার্টি থেকে পোশাক না কেনার ঘোষণা দেয়। একই সঙ্গে লিবার্টির অন্য ১১ ক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে বিষয়টি ই-মেইলের মাধ্যমে জানিয়ে দেয় টেসকো। তখন সেই বিদেশি ক্রেতারাও লিবার্টির ক্রয়াদেশ বাতিল করে। টেসকো অ্যার্কডের সদস্য হওয়ায় লিবার্টি কর্তৃপক্ষ তাদের কারখানটি পরিদর্শন করতে অ্যার্কডকে অনুরোধ জানান। তবে এসসিএম এর প্রতিবেদন গ্রহনযোগ্য ধরে লিবার্টির আবেদন আমলে নেয়নি। পরে লিবার্টি কর্তৃপক্ষ আইনি লড়াইয়ে নামলে তাদের পক্ষেই রায় দেয় উচ্চ আদালত।
পরে বাংলাদেশের বিজিএমই, বিকেএমই, শ্রম মন্ত্রণালয় ও ততকালীন যুক্তরাজ্য হাইকমিশন সহ বিভিন্ন অফিসে বিষয়টি জানানো হয়। পরে সবগুলো প্রতিষ্ঠান থেকে আলাদা ভাবে তিন ধাপে পযবেক্ষক দল পরিদর্শন করেন কারখানাটি। সব প্রতিবেদনই ঝুঁকিমুক্ত ঘোষনা করেন লিবার্টি কারখানাকে। বিজিএমই থেকে অ্যার্কডকে পুনরায় কারখানাটি পযবেক্ষনের জন্য অনুরোধ জানান। কিন্তু তারা বিষয়টি আমলে না নিয়ে আগের অবস্থানে বহাল থাকে। পরে ২০১৫ সালে কারখানার চেয়ারম্যান মোজ্জামেল হক বাদী হয়ে হাইকোর্টে এমসিএস এর প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আপিল করেন। পরে ২০১৭ সালে ১ মার্চ উচ্চ আদালত পূনাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন। যেখানে আকর্ডকে সরজমিনে পর্যবেক্ষন ও পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। এছাড়া প্রতিবেদনটি তাদের নিজে ওয়েবসাইটে প্রকাশের কথা বলেন।
লিবার্টি বন্ধ হওয়ার পর তিন দফা সংবাদ সম্মেলন করেন মোজাম্মেল হক। প্রতিবারই তিনি দাবি করেন, ‘টেসকো ঝুঁকিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে অন্যায় ভাবে কারখানাটি বন্ধ করেছে। আমার কারখানা ভবন নতুন। তিনি বলেন, বছরে ৩৫০ কোটি টাকার পোশাক রপ্তানি বন্ধ আছে। চাকরি হারিয়েছে পাঁচ হাজার শ্রমিক। ব্যাংকঋণ আটকে গেছে।